শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন

মিশিগানের রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের নতুন মেরুকরণ

মিশিগানের রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের নতুন মেরুকরণ

স্বদেশ ডেস্ক:

কিছুদিন আগে মিশিগান রাজ্যে নির্বাচনী সীমানার নতুন মানচিত্র প্রকাশ হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশি কম্যুনিটিতে রশি টানাটানি হয়েছে। এক অংশ চেয়েছেন বাংলাদেশিরা এক মানচিত্রে চলে আসুক, শক্তি বাড়ুক। আরেক অংশ হ্যামট্রামিক বাংলা টাউনের শক্তি ধরে রাখার পক্ষে কাজ করেছেন।

নতুন মানচিত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, স্টেট হাউসে বাংলাদেশি অধ্যুষিত বড় দুটো এলাকা দুইটি মানচিত্রে পড়েছে। ডিস্ট্রিক-১৪ তে পড়েছে ওয়ারেন সিটি। ডিস্ট্রিক-৯ এ পড়েছে হ্যামট্রামিক বাংলা টাউন ও ডেট্রুয়েট সিটির কয়েকটি বাঙালিপাড়া। স্টেট হাউসে মোট জনসংখ্যা রয়েছেন ৯০ হাজার। কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্টদের দাবি, ৯০ হাজারের মধ্যে অর্ধেক বাংলাদেশি। এর মধ্যে ডিস্ট্রিক্ট-৯তে ২৫ হাজার এবং ডিস্ট্রিক-১৪তে ২০ হাজার বাংলাদেশি আছেন। এদিকে স্টেট সিনেট-৩ মানচিত্রে বেশির ভাগ বাংলাদেশি পড়ে গেছেন। এই মানচিত্রের অধীনে ২ লাখ ৫৬ হাজার জনসংখ্যা। কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্টদের দাবি এরমধ্যে ৫০ হাজারই বাংলাদেশি।

তারা বলেছেন, আমেরিকার নিউইর্য়কের পরই বাংলাদেশিদের বড় ঘাঁটি মিশিগানে। হ্যামট্রামিক, ওয়ারেন, ডেট্রুয়েট ও স্টালিং হাইটস সিটিতে বেশির ভাগ বাংলাদেশি থাকেন। ভৌগোলিকভাবেও এসব সিটি কাছাকাছি। বিশ্লেষকরা বলেছেন, মিশিগানের আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশি ভোটাররা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবে। বিশেষ করে রিপ্রেসেন্টটিভ পদে ডিস্ট্রিক্টি-৯ এবং ডিস্ট্রিক্টি-১৪তে। এছাড়া সিনেট-৩ আসনে প্রার্থী যেই হোক বাংলাদেশি ভোটারদের গুনতে হবে। কেউ কেউ বলেছেন, ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশি যোগ্যপ্রার্থী দিলে জেতার সম্ভবনাও আছে।

জানা গেছে, আমেরিকায় আদমশুমারির রিপোর্টের ভিত্তিতে ১০ বছর পরপর স্টেট কনগ্রেশনাল,স্টেট সিনেটর ও স্টেট হাউজ এই ৩ স্তরে নির্বাচনী সীমানা পুনর্বিন্যাস (রিডিস্ট্রিক্টিং) করে থাকে। অতীতে মিশিগান রাজ্যে রাজনীতিবিদ কমিশন রিডিস্ট্রিক্টিং মানচিত্র আঁকতেন। সেই পদ্ধতি পরিবর্তন করে এবারই প্রথম ফ্রীডম নাগরিক কমিশন মানচিত্র এঁকেছেন।

গেল বছরে ১৩ সদস্যের ফ্রিডম কমিশন কয়েক দফায় গণশুনানি করেছে। সরাসরি, ভার্চুয়ালি এবং ফোনে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে নাগরিকরা মতামত দিয়েছেন। কম্যুনিটি একসঙ্গে থাকে, বাজারহাট করে, একই কালচারে জড়িত এইদিকটা খেয়াল রাখে কমিশন। এতে নিজ জাতিগোষ্ঠী থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট সুমন কবির বলেন, একম্যাপে, একসঙ্গে থাকার জন্য দলমত নির্বিশেষে কম্যুনিটির বেশির ভাগেই এক হয়েছিলেন। সেই মোতাবেক কমিশনে প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কমিশনের ৩টি খসড়া গেজেটে একেবারে হুবুহু না হলেও ৯৯ ভাগই আমাদের প্রস্তাবিত ম্যাপটাই ছিল। ফাইনাল হেয়ারিংকালে আমাদের কম্যুনিটির গুটি কয়েকজন কমিশনে আরেকটা ম্যাপ প্রস্তাব করে কম্যুনিটিকে দুই টুকরা করে ফেলেন।

সুমন বলেন, আমাদের ম্যাপটি বাস্তবায়িত হলে কম্যুনিটিই সুফল পেতেন। বিশেষ করে কম্যুনিটি থেকে স্টেট রিপ্রেসেন্টটিভ হতে চাইতেন কম্যুনিটির ভোটেই নির্বাচনে জয়ী হতে পারতেন। এখন দুটো মানচিত্রে ভাগ হয়ে পড়ায় আমরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। তিনি জানান, জনপ্রতিনিধিসহ রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে কম্যুনিটির কদর আগের চেয়ে বহু বেড়েছে। তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাদের কম্যুনিটি নেতাদের কাছে টানেন।

কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট দেলোয়ার আনসার বলেন, হ্যামট্রামিক সিটির ড্রাইভ থেকে ওয়ারেন সিটির ১৪ মাইল পর্যন্ত এক মানচিত্রে থাকার জন্য কমিশনের কাছে আমরা দাবি করেছিলাম। কারণ এই গণ্ডির ভেতরেই বেশির ভাগ বাংলাদেশির বসবাস। তবে শতভাগ সফল না হলেও স্টেট সিনেটের ডিস্ট্রিক্ট-৩ এবং স্টেট হাউস ডিস্ট্রিক্ট-১৪ এর মানচিত্রে আমাদের দাবির ৭০ ভাগ প্রতিফলন হয়েছে। রিডিস্ট্রিক্টিং নিয়ে আমরা যতটুকু ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, ততটুকু সফলতা পেয়েছি।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব মিশিগানের (বাম) সভাপতি জাবেদ চৌধুরী বলেন, রিডিস্ট্রিক্টিং সর্ম্পকে আমাদের কম্যুনিটিকে প্রথমে জাগিয়ে তুলেন উদ্যামী ৩ তরুণ সুমন কবির,দেলোয়ার আসনার ও ইকবাল ফেরদৌস। আমরাও চেয়েছি সব বাংলাদেশি একত্রে, এক মানচিত্রে থাকি। আমাদের কম্যুনিটি বড় হোক এবং শক্তি বাড়ুক। ওয়ারেন, বাংলা টাউন, হ্যামট্রামিক পাশাপাশি সিটি। এক মানচিত্রে থাকার সুযোগ ছিল, কিন্তু একটি ননপ্রোফিট সংগঠনের পরিচালক রেবেকা ইসলাম এবং হ্যামট্রামিক সিটির মেয়র কেন্দ্রিরিট ছিলেন কামাল রহমান ভাইসহ কয়েকজন আরেকটি মানচিত্র প্রস্তাব করেন। তারা এটা করাতে কম্যুনিটির একটা বড় অর্জন নষ্ট হয়েছে। আমরা যেন ক্ষুদ্র ও ব্যক্তি স্বার্থ ত্যাগ করি। ওয়ারেন-হ্যামট্রামিক অঞ্চল ভিত্তিক চিন্তা না করে আমরা যেন বড় আকারে চিন্তা করি। আসুন সবাই মিলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু করে যাই।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশি আমেরিকান কংগ্রেস সভাপতি মো.কামাল রহমান বলেন, তাদের অবস্থান থেকে তারা মনে করেছেন হ্যামট্রামিকসহ শুধু বাঙ্গালী কম্যুনিটি একটা ডিস্ট্রিক পেয়ে যাবে। আসলে রিডিস্ট্রিক্টিং এভাবে কাজ করে না। তাদের দুই-একজনের সাথে আলাপ হয়েছিল। আমি বলেছিলাম, ট্রয় সিটিতে বাংলাদেশি আছেন, ফার্হিমটনেও আছেন এবং রচেস্টার সিটিতে আছেন বাংলাদেশি। সব বাংলাদেশিকে এক ম্যাপে রাখা প্যাক্টিক্যালি সম্ভব না। কৌশলী দেখতে হবে, কোন জায়গা সবচেয়ে কাছে এবং শক্তিশালী অবস্থানে। ৮ মাইল ম্যাকনোকিলসের পরে একজন বাংলাদেশি পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। ৯ মাইল থেকে ১৪ মাইল রায়ানের আশপাশে আছেন বাংলাদেশি। কিন্তু ওয়ারেন সিটির সাথে এক করতে যেয়ে টু অ্যান্ড হাফ মাইল যদি গ্যাফ হয় আর মাঝখানে বাংলাটাউন গ্যাফ হয় তাহলে হ্যামট্রামিক বাংলাদেশির শক্তি বিভক্ত হয়ে যাবে। বাংলাটাউন, হ্যামট্রামিক আর নর্থ ডেট্রুয়েটের বাংলাদেশি কম্যুনিটিকে একসাথে রাখতে পেরেছি, এখানে আমাদের কম্যুনিটি সাকসেসফুল হয়েছে। হেয়ারিংয়ের সময় কেউ না কেউ উপস্থিত থেকেছেন। লেগে থাকার কারণে বেশির ভাগ বাংলাদেশি-ই নতুন মানচিত্রে কভার হয়েছেন।

এপিআইএ ভোটের পরিচালক রেবেকা ইসলাম বলেন, জনসংখ্যার দিক আছে। জেলাগুলো কাছাকাছি হতে হবে। কাউন্টি, শহর এবং টাউনশিপ সীমানাও দেখেছে কমিশন। অর্থাৎ ৬টি কাইটেরিয়ায় রিডিস্ট্রিক্টিং হয়েছে। ওয়ারেনে বাংলাদেশিদের কোনো ডাটা বেজ নেই। হ্যামট্রামিক বাংলা টাউন আমাদের শক্তি। কারণ ওখানে একসাথে বহু বাংলাদেশি থাকেন। কমিশনের খড়সা তালিকায় দেখি বাংলা টাউন ৩টি ডিস্ট্রিক্টিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বাংলা টাউন, হ্যামট্রামিককে একসাথে রাখার জন্য কাজ করেছি। আমাদের দাবি যৌক্তিক হওয়ায় কমিশনে অ্যাপ্রুভ হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877